সুন্দর ডিজাইন দেখে ফোন কিনে ভুল করছেন না তো? Build quality of smartphones

প্রতিটি স্মার্টফোন তৈরি হয় ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইন নিয়ে। মূলত স্মার্টফোনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করার লক্ষ্যেই প্রতিটি স্মার্টফোনের ডিজাইনের পরিবর্তন হয়। আমরা দেখতে পাই কোনো কোনো স্মার্ট ফোন বক্সি (Boxed) ডিজাইনের হয়ে থাকে। আবার কোন কোন স্মার্টফোন সাইট থেকে কার্ভ করা হয়ে থাকে। অনেকে স্মার্ট ফোনের ডিসপ্লে কার্ভ করা থাকে। এই সবগুলো ডিজাইন শুধুমাত্র স্মার্টফোনের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে না। এই প্রতিটি ডিজাইনের পেছনে ফোনের বিল্ড কোয়ালিটি (build quality of smartphones) অর্থাৎ ফোন কতটা শক্ত করতে হবে তাও নির্ভর করে।

অনেক সময় কোন পাতলা ও সুন্দর করতে গিয়ে তার বিল কোয়ালিটি খারাপ হয়ে যায়। অর্থাৎ ফোনটি সহজেই ভেঙে যেতে পারে।

তো কিভাবে বুঝবেন আপনার কাঙ্খিত স্মার্টফোনটির বিল্ড কোয়ালিটি কেমন? এইসব নিয়েই থাকবে আজকের ইনফরমেটিভ আর্টিকেল। পাশাপাশি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন স্মার্টফোনের বিভিন্ন কোয়ালিটির ডিজাইনের ভালো এবং খারাপ দিক সম্পর্কে। যা আপনাকে আপনার পরবর্তী স্মার্ট ফোনটি কেনার আগে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

Plustic Back vs. Glass back vs. Metal back

সর্বপ্রথম কথা বলা যাক স্মার্টফোনের ব্যাক সাইট বা ব্যাক পার্ট নিয়ে। আমরা অনেক স্মার্ট ফোনের ব্যাক পার্ট দেখতে পাই গ্লাস দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। কোনোটি তৈরি করা হয় প্লাস্টিক দিয়ে আবার কোনোটি মেটাল বা ধাতব পদার্থ দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। এর প্রতিটি যেমন রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইন বা সৌন্দর্য তেমনি রয়েছে নিজস্ব ভালো ও খারাপ দিক।

যেমন আমরা যদি ফোনের হিটিং নিয়ে বলি সে ক্ষেত্রে দেখা যাবে প্লাস্টিক ব্যাক যুক্ত ফোন দ্রুত ঠান্ডা হয়ে যায়। যেখানে মেটাল বা গ্লাস ব্যাক যুক্ত ফোন বেশি সময় তাপ ধরে রাখে যা ফোনের জন্য ক্ষতিকারক। ভিউরেবিলিটির দিক থেকে বিবেচনা করলে মেটাল ব্যাক এর ফোন সবথেকে বেশি শক্তপোক্ত হয়ে থাকে। যদিও 2022 সালে এসে প্রায় কোনো ফোনেই মেটাল এর ব্যাক পার্ট দেওয়া হয়না। এর একমাত্র কারণ হলো হিটিং থেকে বাঁচানো।

প্লাস্টিক ফ্রেম নাকি মেটাল ফ্রেম কোনটি সবথেকে ভালো?

স্মার্টফোনের ফ্রেম মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে।  প্রথমত প্লাস্টিক ফ্রেম এবং দ্বিতীয়ত মেটাল ফ্রেম। নিঃসন্দেহে মেটাল ফ্রেম প্রিমিয়াম ফোনে ব্যবহার করা হয়। স্মার্টফোনে মেটালের ফ্রেম ব্যবহার করার কারণ হলো ফোনকে বেন্ড বা বাঁকা হয়ে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা। প্লাস্টিকের তৈরি ফ্রেম যুক্ত স্মার্টফোন খুব সহজেই ভেঙে যেতে পারে। যার ফলে পুরো স্মার্টফোনটি অনেক সময় বাতিল করে দিতে হয়। (Metal frame is important for better build quality of smartphones)

তবে মেটাল ফ্রেম এর একটি অসুবিধে হলো এর মধ্য দিয়ে নেটওয়ার্ক সিগন্যাল ভালোভাবে প্রবেশ করতে পারে না। যেহেতু নেটওয়ার্ক এন্টেনা স্মার্টফোনের ভিতরে থাকে সেহেতু মেটাল ফ্রেম দিলে নেটওয়ার্ক সিগন্যাল মেটাল ফ্রেম ভেদ করে এন্টেনায় গিয়ে পৌছাতে পারেনা। যার ফলে নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি মারাত্মক সমস্যা দেখা যায়।

Network antena band on metal frame phone
Antenna band

তবে এই সমস্যা সমাধানের জন্য মেটাল ফ্রেমের উপরে এন্টেনা ব্যান্ড দেওয়া হয়। দামি বা মেটাল ফ্রেম যুক্ত স্মার্টফোনের ফ্রেম এর দিকে তাকালে দেখতে পাবেন কিছু লাইন এর মত দেখা যায়। এগুলোই মূলত অ্যান্টেনা ব্র্যান্ড যা নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি জন্য ব্যবহার করা হয়। তবে প্লাস্টিকের মধ্যে দিয়ে নেটওয়ার্ক সিগন্যাল খুব সহজেই ফোনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারে। যার ফলে আলাদাভাবে এন্টেনা ব্যান্ড দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।

স্লিম বা পাতলা ফোনের অন্ধকার দিক

Poor build quality of smartphones
Image from Twitter

পাতলা বা স্লিম ফোন কার না পছন্দ? আমরা প্রায় সবাই পাতলা ফোন ব্যবহার করতে পছন্দ করি।  অনেক সময় স্মার্টফোনের লুক বা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে গিয়ে স্মার্টফোনকে অত্যাধিক পাতলা বানানো হয়। যা স্মার্টফোনের  ডিউরেবিলিটি উপর প্রশ্ন চিহ্ন তৈরি করে। পাতলা স্মার্টফোনগুলোর ফ্রেম খুবই পাতলা হয়ে থাকে। যা খুব সহজেই ভেঙে যেতে পারে। তাই স্লিম স্মার্টফোন কেনার আগে ইউটিউব থেকে ওই ফোনের ডিউরেবিলিটি টেস্ট দেখে নিবেন।

গোরিলা গ্লাস কি?

আমরা অনেক সময় শুনে থাকি যে স্মার্টফোনে গোরিলা গ্লাস ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এই গেরিলা গ্লাস আসলে কি?

Gorilla glass from corning
Image source Corning

স্মার্ট ফোনের ডিসপ্লে বা ফোনের পিছনের অংশকে স্ক্র্যাচ এবং আঘাত থেকে রক্ষা করার জন্য বিভিন্ন গ্লাস প্রটেকশন ব্যবহার করা হয়। গেরিলা গ্লাস মূলত এমনই এক ধরনের গ্লাস যা Corning নামক একটি কোম্পানির দ্বারা তৈরি করা হয়ে থাকে। কর্নিং বর্তমানে তাদের সপ্তম জেনারেশনের (7-Gen) গরিলা গ্লাস তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। গেরিলা গ্লাস সাধারণত অন্য গ্লাসের তুলনায় পাতলা,  হালকা ও তুলনামূলক বেশি আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা রাখে। এর জন্যই এই গেরিলা গ্লাস এর আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা।

তৃতীয় (Gorilla glass 3) এবং পঞ্চম জেনারেশনের (Gorilla glass 3) গরিলা গ্লাস সাধারণত মিড রেঞ্জের স্মার্টফোনে দেখা যায়। তবে লেটেস্ট Gorilla glass 6 এবং Gorilla glass 7 এবং Gorilla glass Victus (ভিক্টাস) ব্যবহার করা হয় ফ্ল্যাগশিপ স্মার্টফোনে। যা স্মার্টফোনকে হালকা, স্লিম এবং অনেক আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা দিয়ে থাকে।

গেরিলা গ্লাস শুধুমাত্র ডিসপ্লে ও ব্যাক সাইডকে প্রটেকশন দেওয়ার জন্যই ব্যবহার করা হয় না। গেরিলা গ্লাস ক্যামেরাতেও ব্যবহার করা হয়। যা স্মার্টফোনের ক্যামেরাকে স্ক্র্যাচ এবং আঘাত থেকে রক্ষা করে। সাধারণত গ্লাসকে স্ক্র্যাচ থেকে রক্ষা করার জন্য এর উপরে প্রকার কোটিং বা প্রলেপন দেওয়া হয়।  এর ফলে গ্লাস খুব সহজে স্ক্র্যাচ পড়ে না। তবে এই প্রলেপন এর ফলে আলোর প্রতিফলনের পরিমাণ বেড়ে যায়। ফলস্বরূপ স্মার্টফোনের ক্যামেরার ভিতরে আলো প্রবেশ কিছুটা বাধার সৃষ্টি হয়। যার ফলে ক্যামেরা সম্পূর্ণ লাইট ক্যাপচার করতে পারে না এবং এর ফলে ক্যামেরা পারফরমেন্সের উপর প্রভাব পড়ে।

Reflection of light on camera glass

তবে গরিলা গ্লাসের DX এবং DX+ ভার্সনের গ্লাস এই প্রতিফলিত আলোর পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে দিতে সক্ষম। এতে ক্যামেরা সেন্সরে অধিক পরিমাণে আলো প্রবেশ করতে পারবে। যার ফলে লো লাইটে ক্যামেরা ভালো পারফর্ম করতে পারবে।
এই বিষয়টি আরো বিস্তারিত ভাবে জানার এবং বুঝার জন্য এই ভিডিওটি দেখুন

তো এই ছিলো ফোনের বিল্ড কোয়ালিটি সম্পর্কে কাজের এই ইনফরমেটিভ আর্টিকেল। আশা করি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি আপনাকে একটি ফোনের বিল্ড কোয়ালিটি সম্পর্কে ধারণা দিতে পেরেছি। এই আর্টিকেলে উল্লেখ করা বিষয়গুলো মাথায় রাখলে খুব সহজেই সঠিক smartphone টি বেছে নিতে পারবেন।

1 thought on “সুন্দর ডিজাইন দেখে ফোন কিনে ভুল করছেন না তো? Build quality of smartphones”

Leave a Comment